হাওজা নিউজ এজেন্সি: তৎকালীন ইরাকে শান্ত পরিবেশ বিরাজ করছিল। এমনই এক দিনে তরুণ আব্দুলবাসেত কাজিমাইনের পবিত্র মাজারে প্রবেশ করেন। তাঁর আগমন উপলক্ষে মাজারের পরিবেশ আরও শান্ত, মর্যাদাপূর্ণ ও আধ্যাত্মিক হয়ে ওঠে। ভক্ত–জিয়ারতকারীদের উপস্থিতি, আলোর মৃদু ঝিলিক এবং দোয়ার শব্দে সেদিন মাজার ভরে উঠেছিল।
আব্দুলবাসেত মাজারের সামনে দাঁড়িয়ে কিছু মুহূর্ত নীরব থাকেন এবং এরপর শুরু করেন তাঁর বিখ্যাত তিলাওয়াত—যা আজও কোরআন পাঠের ইতিহাসে অন্যতম শ্রেষ্ঠ বলে বিবেচিত।
তাঁর কণ্ঠ থেকে প্রথম আয়াত বের হতেই মাজারের পরিবেশ বদলে যায়। শক্তিশালী, পরিষ্কার, প্রভাবশালী ও মনকাড়া সেই সুর সবাইকে গভীরভাবে আবেগাপ্লুত করে। তাঁর কোরআন তিলাওয়াত মাজারের প্রতিটি দালানে প্রতিধ্বনি তুলছিল এবং উপস্থিত লোকজন মুগ্ধ হয়ে শুনছিলেন। অনেকে আবেগে কান্নায় ভেঙে পড়েন, কেউ স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন, আবার কেউ মাটিতে বসে পুরো মনোযোগ দিয়ে শুনছিলেন।
সেদিন তিনি তিলাওয়াত করেন—
•সুরা হাশরের ১৮ থেকে শেষ পর্যন্ত
•সুরা তাকভীর
•সুরা ফজরের ২৭ থেকে শেষ পর্যন্ত
এটি কেবল একটি তিলাওয়াত ছিল না—এ যেন ছিল উপস্থাপনা নয়, বরং এক গভীর আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতা। সেই সময় প্রখ্যাত কোরআন শিক্ষাগুরু আবুলআইনাইন শায়েশা এবং আব্দুলফাত্তাহ শাশাঈ–ও উপস্থিত ছিলেন। মাজারের দায়িত্বশীলরাও সেই মুহূর্তে থেমে গিয়ে মনোযোগ দিয়ে তিলাওয়াত শুনছিলেন।
বাগদাদ শহরও অনুভব করেছিল সেই সুর
বলা হয়, সেদিন বাগদাদের বিভিন্ন স্থান থেকেও মাজারে প্রতিধ্বনিত হওয়া আব্দুলবাসেতের তিলাওয়াত শোনা যাচ্ছিল। দূর–দূরান্ত থেকে আসা মানুষ বলেছিলেন, “মনে হচ্ছিল সুর আকাশ থেকে নেমে আসছে।” আরও অনেকে বলেন, “সেদিন কাজিমাইনের মাজার যেন স্বর্গের মতো শান্তি ও সৌন্দর্যে ভরে গিয়েছিল।”
অতীতের সেই সুর আজও জীবন্ত
এই ঐতিহাসিক তিলাওয়াত আব্দুলবাসেতের কোরআনের প্রতি ভালোবাসার এক উজ্জ্বল উদাহরণ। তাঁর প্রয়াণবার্ষিকীতে যখন সেই তিলাওয়াত আবার শোনা যায়, মনে হয় যেন আমরা ফিরে যাই সেই সময়ের কাজিমাইনে—সুর, আলো আর আধ্যাত্মিক আবেগে ভরা এক বিশেষ মুহূর্তে।
আব্দুলবাসেত ১৯২৭ সালে মিশরে জন্মগ্রহণ করেন এবং ৩০ নভেম্বর ১৯৮৮ সালে মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর মৃত্যুদিন উপলক্ষে আব্বাস সেলিমি সেই ঐতিহাসিক তিলাওয়াতের স্মৃতি নতুনভাবে তুলে ধরেন।
আপনার কমেন্ট